শেখ মোস্তফা কামাল,কেশবপুর(যশোর): যশোরের কেশবপুরে সু-সাহিত্যিক কবি মনোজ বসুর ১২২তম জন্মজয়ন্তী-২০২৩ পালন করা হয়েছে। ২৫ জুলাই কবির জন্মদিন উপলক্ষে মনোজ বসু জন্মজয়ন্তী উদযাপন পরিষদের আয়োজনে মঙ্গলবার বিকেলে গড়ভাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে শিক্ষার্থীদের চিত্রাঙ্কন, রচনা প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে মনোজ বসু জন্মজয়ন্তী উদযাপন পরিষদের আহবায়ক সিদ্ধার্থ বসু সভাপতিত্ব করেন।
মনোজ বসু জন্মজয়ন্তী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, চুকনগর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (অবসরপ্রাপ্ত) হাসেম আলী ফকির, উপজেলা খেলাঘর এর সভাপতি আব্দুল মজিদ (বড়ভাই), ন্যাশনাল প্রেস সোসাইটি, গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থা কেশবপুর উপজেলা শাখার সভাপতি শামীম আখতার মুকুল, পাঁজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাপস দে, গড়ভাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুপ্রভাত কুমার বসু, রাজনগর বি এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাত কুমার কুন্ডু, গড়ভাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আতিয়ার রহমান, ডোঙ্গাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কুমুদরঞ্জন মন্ডল, পাঁজিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার পরিচালক বাবুর আলী গোলদার, পাঁজিয়া সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ এর সভাপতি নজরুল ইসলাম খান, পাজিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ আলবাহার, সাহিত্য সংগঠন আবহমান এর পরিচালক রিয়াজ লিটন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিপ্রতীপ এর পরিচালক নয়ন বিশ্বাস, পাঁজিয়া বইমেলা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাদিউজ্জামান জয়, বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজ সেবক সনৎ বসু হরি, সমাজসেবক মহিউদ্দিন প্রমূখ।
উল্লেখ্য, মনোজ বসু ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের ২৫ শে জুলাই বৃটিশ ভারতের বর্তমান বাংলাদেশের যশোর জেলার কেশবপুর থানার ডোঙ্গাঘাটা গ্রামে এক মধ্যবিত্ত একান্নবর্তী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তবে এলাকায় পরিবারের বংশগৌরব ও খ্যাতি ছিল। তার পিতার নাম রামলাল বসু। মাত্র আট বৎসর বয়সে পিতৃহীন হন মনোজ বসু। তখন তিনি পাঠশালার গণ্ডি পার হননি। প্রথমে নিজ গ্রামে পড়াশোনা করেন, পরে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার রিপন কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পাশ করেন। এরপর খুলনার বাগেরহাট কলেজে ভর্তি হন। এখানে পড়ার সময়ই তিনি বিপ্লবী দল যুগান্তরের সংস্পর্শে আসেন এবং স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে তিনি আই.এ. পাশ করেন। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার সাউথ সুবারবন কলেজ, বর্তমান আশুতোষ কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন। পরবর্তীতে আইন পড়া শুরু করলেও আর্থিক কারণে তা শেষ করতে পারেননি। তবে মনোজ বসুর সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ ছিলো বাল্যকাল থেকেই। মাত্র ৭ বছর বয়স থেকেই কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন। ছাত্রাবস্থায় সহপাঠীদের নিয়ে হাতে লিখে দেওয়াল পত্রিকা বের করতেন। পত্রিকায় প্রকাশিত তার লেখা প্রথম গল্প ছিলো “গৃহহারা”। তারপর ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে গল্পের সংকলন ‘বনমর্মর’ প্রকাশিত হয়। নিজে নিয়মিত কবিতা, গল্প লেখার পাশাপাশি অন্যান্য প্রকাশনার কাজও করে গেছেন। গুরুসদয় দত্ত রচিত ব্রতচারীদের জন্য অপরিহার্য সঙ্গী “ব্রতচারী সখা’র ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশনা করেন মনোজ বসু। এছাড়াও ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে গুরুসদয় দত্ত প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলার শক্তি’ মাসিক পত্রিকার সম্পাদনা করতেন তিনি। প্রকাশনা ও সম্পাদনা কাজের পাশাপাশি তিনি নিজে উপন্যাস রচনা শুরু করেন। তার লেখা প্রতিটি উপন্যাসে দেশ, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের মানুষের দৈনন্দিন খুঁটিনাটি সমস্যা, বাংলার নিসর্গ চিত্র, গ্রামীণ মানুষের জীবনাচরণ চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে। সে সময়ের সশস্ত্র বিপ্লবীদের ব্যক্তিজীবন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রন্থ “ভুলি নাই”। মূলতঃ মানুষের জীবনকথা ও জগৎ নিয়ে বিভিন্ন পটভূমিতে তার অভিজ্ঞতা পরিস্ফুট হয়েছে অসংখ্য কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে, নাটকে আর ভ্রমণকাহিনীতে। তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি হিন্দী, ইংরেজি, গুজরাটি, মারাঠা, মালয়ালম ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ণও হয়েছে। মনোজ বসু পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতি মণ্ডলীর অন্যতম ব্যক্তি ছিলেন। ভারতের বহু সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংস্থার পৌরহিত্য করেছেন ও ভারতীয় সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। মনোজ বসু ছিলেন একজন প্রথম শ্রেনীর ছোট গল্পকার। জীবন সংগ্রামের ৮৬ বছর পার করে মনোজ বসু ১৯৮৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গ, কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন এলাকার কবি, সাহিত্যিক, সামাজিক সংগঠন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ এবং এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।